বাইডেনের বগলে ভারত, “জঙ্গিনেতা” হতে চান!


বাইডেনের বগলে ভারত, “জঙ্গিনেতা” হতে চান!

গৌতম দাস

১৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০৬
https://wp.me/p1sCvy-3GN

 

Xinjiang – China’s Uighur Problem

 

এতদিন কথিত যে জঙ্গীপনা আমেরিকার চক্ষুশুল ছিল এখন প্রেসিডেন্ট  বাইডেন, বগলে ভারতকে নিয়ে কী নিজেই সেই “জঙ্গীনেতা” হতে চলেছেন? এই প্রশ্নটা ক্রমে ধেয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশে চীনা যেকোনো বিনিয়োগ প্রকল্প বা ইকোনমিক তৎপরতার প্রতি আমেরিকা-ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বিতার চোখ দিয়ে তাকানো – এই দেখা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু  কোন ঈর্ষা বা অন্তর্ঘাতমূলক চোখ?  না, এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। শুধু তাই নয় এটা আত্মঘাতীও। মানে বোকা বোকা চোখমুখের কিছু স্টুপিড চিন্তা ছাড়া আর কীইবা বলা যায়! তবে প্রতিহিংসাপরায়ন মানসিক অসুস্থ মানুষ তো আত্মঘাতিই! অপরের যাত্রাভঙ্গ করে যেখানে যারা সুখ, অন্যকে কষ্ট দেওয়ার ভিতরের মিথ্যা-সুখ পেতে চায় আর হয়রান হয়!
বিভিন্ন দেশে চীনা যেকোনো বিনিয়োগ প্রকল্প থাকলেই এর উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে অন্তর্ঘাতমূলক [sabotage] হামলা করা বা এমন হামলাকে সমর্থন করা [Chinese Projects in Pakistan Prove Tempting Targets for Terrorist Groups………]  – এসবই আমেরিকা ও ভারতের চীন মোকাবিলার কৌশল ও ততপরতা হয়ে উঠছে।  অথচ এটা যেকোন বিচারেই অগ্রহণযোগ্য। এমনকি তা এদুই দেশের স্টান্ডার্ডেও অগ্রহণযোগ্য।  বলাই বাহুল্য এসব আসলে দেউলিয়াত্বের লক্ষণ, নিজ দেশ-রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সক্ষমতা যখন নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে বলে শাসকেরা অনুভব করে তখন এমন বেদিশ হবার লক্ষণ এগুলো!  সম্ভবত এটাই এর সবচেয়ে সঠিক ব্যাখ্যা!

বুদ্ধিমানরা পড়শির উন্নতি দেখে ঈর্ষার পথে যাওয়ার আত্মঘাতী ভুলের দিকটা আগেই দেখে ফেলতে পারেন। তাই তারা এপথ পছন্দ করবেন না। এর চেয়ে পড়শির ঐ ‘উন্নতির’ সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ খুঁজে পেলে তা থেকে নিজের জন্য কোনো রাস্তা বের করতে পারেন কি না সেই চোখে তারা ঘটনাকে দেখে থাকেন। নয়তো পড়শির তৎপরতা দেখে সেখান থেকে আগ্রহ পেয়ে নিজেই পাশে তেমনই কিছু খাড়া করেন। এসবই হল গুরুত্বপুর্ণ পজিটিভ চোখ খুলে ঘটনার দিকে তাকানো ও বুঝার পথ।
তবে আরেক বিকল্পও আছে, স্বভাবতই তা নেতি ও ঈর্ষার পথ। পড়শির উন্নতির বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে প্রপাগান্ডা শুরু করা আর তাতে এক রংচঙ্গা দুনিয়া বানানো আর সেটা দেখিয়ে প্রতারণা ইত্যাদি। কিন্তু এই প্রপাগান্ডা করে বেনিফিট মানে এর লক্ষ্য কী?

সবচেয়ে বড় কথা, খোদ নিজের বেনিফিট কী? ঈর্ষায় ডুবে থাকা মনে এর খবর থাকে না। বরং বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, আমেরিকাই এমন প্রপাগান্ডা ভারতকে গিলিয়েছে। একপর্যায়ে দেখা যায়, ভারত তা মিথ্যা জেনেও বিশ্বাস করেছে। অথচ উদ্দেশ্য কী, বেনিফিট কী তবু সে খবর ভারত নেয়নি; যদিও এসব ক্ষেত্রে আমেরিকার নিজ উদ্দেশ্য নিজের কাছে স্পষ্টই থাকে যে, সে ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়, চীন-ভারতের গঠনমূলক বা পরস্পর নির্ভরশীল কোন সম্পর্ক যেন না খাড়ায় যায়। কারণ এমন হতে না দেয়াটাই আমেরিকার স্পষ্ট স্বার্থ। বিশেষত এশিয়ায় দু’টি বড় অর্থনীতি চীন-ভারত যেন আমেরিকার স্বার্থের বাইরে গিয়ে নিজেরাই পারস্পরিক সহযোগিতার কোন আসর না বসিয়ে ফেলে।

ভারত-আমেরিকা এমন সম্পর্ক বানানো নিয়েও হয়ত বাইরে থেকে খুব কিছু বলার নেই। কারণ সিদ্ধান্ত মানেই তো তা যার যার নিজের। এছাড়াও আর কারণ, গ্লোবাল নেতৃত্বের পালাবদলের এই কালে জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতার দুনিয়া। যে যেখানে স্বার্থ ঠিক বা ভুলভাবে বুঝবে সে দায় শেষবিচারে তারই। আর এটা তার নিজেই চয়েজ – তাতো বটেই।  তবু ঈর্ষার আরেক চরম অবস্থার পথ ও পর্যায় আছেঃ স্যাবোটাজ বা অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা। প্রতিদ্বন্দ্বীর স্থাপনা, সম্পত্তি অথবা ব্যক্তির ওপর হামলা আর ধ্বংসাত্মক কাজে নেমে যাবার ভূমিকা নেয়া।  বাইডেন বগলে ভারতকে নিয়ে সে পথের চয়েজে যাবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন!

প্রথম কথা ও এককথায় বললে, এই পথ আত্মঘাতী। ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে হতাশায় এসব কাজে জড়িয়ে  নিজেকে খুবই বুদ্ধিমান ও সফল মনে হতে পারে। কিন্তু এটা ভুল। বাস্তবত এটা হল, প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই যদি সবার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ-তৎপরতায় জড়িয়ে যায় এতে সবারই ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। যেন শহরের সবাই সবার বিরুদ্ধে ছিনতাইকারী-লুটেরা হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা করছে, এমনটা কল্পনা করা যায় বড় জোর বাস্তবে  তা হতে পারে না।
যদি সাময়িক লাভের চোখে না-ই দেখি, তবে জীবন মানেই কিন্তু এক ইতিবাচক লক্ষ্যের জীবনই বুঝায়। তবে যে আসলে নিজ জীবন-তৎপরতার কোনো ভবিষ্যৎ দেখে না, হতাশ, সেই অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা, আত্মঘাতী দিকটা দেখতে পায় না। বাইডেন, বগলে ভারতকে নিয়ে কি এখন অন্তর্ঘাতমূলক কাজের ‘জঙ্গিনেতা’র মত হতে চলেছেন?

The Karakoram Highway, also known as the China-Pakistan Friendship Highway, is part of China’s Belt and Road Initiative. Image: AFP Forum

পাকিস্তানের সিপিইসিঃ
‘সিপিইসি’ প্রকল্পে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ আর কোন সীমায় থাকতে পারছে না। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর বা সংক্ষেপে ‘সিপিইসি’[CPEC] , এটা হল পাকিস্তানে চীনের এক সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্প যেখানে মোট ৬২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে। এর শুরু হয়েছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান জলসীমায় গোয়াদরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে নেয়া থেকে। এরপরে বন্দরের সাথে যুক্ত ডাঙ্গা ভূখণ্ডে পাকিস্তানের চার প্রদেশকেই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বুকচিরে যাওয়া হাইওয়ে, এটি পাকিস্তানের উত্তরের সীমান্ত শেষ হয়ে পরে চীনের জিনজিয়াং (উইঘুর) প্রদেশের কাশগড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধে হেরে যাওয়া হিটলারের জার্মানি বা ইতালিসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত সারা ইউরোপকে পুনর্গঠনে (রিকনস্ট্রাকশন ও ডেভেলপমেন্ট) আমেরিকা এক বিপুল অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রকল্প নিয়েছিল যা “মার্শাল প্ল্যান” নামে পরিচিত ছিল। অনেকে একালের সিপিইসি প্রকল্পকে পাকিস্তানে নেয়া চীনের ‘মার্শাল প্ল্যান’ বলেও তুলনা করে থাকে।

তবে এ তো গেল ইতিবাচক চোখে দেখে বর্ণনা। আমেরিকা বা ভারতের স্বার্থ দেখা যারা নিজেদের কাজ মনে করবে বা এ জন্য নিয়োজিত তাদের এর চেয়ে ভিন্ন চোখে দেখাই স্বাভাবিক, অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখে দেখবে সেটা তো ঠিকই আছে। কিন্তু তাই বলে ‘সিপিইসি’ শব্দ বা ধারণাটা কোথাও দেখা পাওয়া মাত্রই ঈর্ষায় জ্বলে উঠতে হবে, এটা সুস্থ লক্ষণ নয়। অথচ এটা কি অপ্রয়োজনীয় নয়? কিন্তু এরপরেও এমন ভয়াবহ কিছুর দিকে পরিস্থিতিকে কেউ কেউ জেনে না জেনে টানছে।

‘সিপিইসি’ যদিও চীনা ঋণ-বিনিয়োগে নেয়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প এবং এতে ওনারশিপ, লাভালাভ ও দায়সংশ্লিষ্টতা অনুভবে রাখার জন্য সে দেশের চার প্রাদেশিক সংসদেও আলাদা আলাদা করে এই প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। তবু এই প্রকল্প পাকিস্তানের মতই প্রায় সমান ব্যবহারকারী এবং সুবিধাভোগী হল চীনও। অর্থাৎ চীন কেবল বিনিয়োগকারী নয়। সিপিইসি-এর হাইওয়ে চার প্রদেশের ওপর দিয়েই গিয়ে চীনে প্রবেশ করেছে। ফলে চীনেরসহ পাকিস্তানের সব প্রাদেশিক ভূখণ্ড থেকেই রওনা দিয়ে নিজ উতপাদিত অথবা আমদানিকৃত কাচামাল –  এমন সকল আমদানি-রফতানির পণ্য নিয়ে গভীর বন্দরে আসা যাওয়া করা সবচেয়ে সহজ। তাই সবাই এর বেনিফিসিয়ারি।

কথাটা আরো ভালো বুঝা যাবে যদি চীনের ভূগোল মনে রাখি। চীন আসলে সাড়ে তিন দিক থেকে পাহাড়ে ঘেরা ল্যান্ডলকড এক ভূখণ্ড যার কেবল মাত্র পুব দিকেরও আবার একাংশ খোলা। এর মধ্যে পশ্চিম দিক আবার হিমালয় পর্বতমালার মতো পাহাড়ে ঘেরা যেখানে চাইলেও উচ্চতা আর দুর্গমতার কারণে যোগাযোগের রেল বা সড়ক নির্মাণ খুবই কঠিন।

সেই আশির দশক থেকে  চীন আমেরিকান বিপুল বিনিয়োগ নিয়েই আজকের জায়গায় এসেছে, কোন সন্দেহ নাই। আমেরিকাকে বিপুল বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে চীনের অর্থনীতি আজকের জায়গায় আসতে রওনা দিয়েছিল বলা যায় সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। পরের ৩০ বছরে ক্রমে লাগাতার ডাবল-ডিজিটের পথে উন্নতি করে সেই চীন আজকের যে চীন হয়েছে সে আসলে এখন আবার খোদ আমেরিকারই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, গ্লোবাল নেতার জায়গা নিতে চায়। তাই সেই সময়কালটাকে (১৯৭৮-২০১০) আমেরিকার দিক থেকে বলা যায়, এক দিকে বিপুল বিনিয়োগের বাজার পাওয়ার সুযোগ, সুখ ও লোভ অন্য দিকে চীনের উন্নতিতে চীন আমেরিকারই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে এই টেনশন – এমন এক মিশ্র অনুভব নিয়ে পার করতে হয়েছে।

The Strait of Malacca

তাই শেষের দিকে চীন-আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা খোলাখুলি হয়ে ওঠেছিল। ওতএব  এই  “উন্নত- চীনের” দুর্বলতা খুঁজে সেটাকে চেপে ধরে রাখার উপায় বের করতে গিয়েছিল ওয়াশিংটন। পেয়েছিল এক ‘মালাক্কা প্রণালী’ [Strait of Malacca]। এটা হল সমুদ্রে জাহাজ চলাচল পথের এক রূট। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল আনা চীনের অনিবার্য প্রয়োজন। কিন্তু তা চীনা বন্দরে নিতে গেলে এই মালাক্কা প্রণালী পার হয়েই যেতে হবে। সেই সমুদ্রপথে মালাক্কা প্রণালী হল সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর আগে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার ভূখণ্ডের মাঝখান দিয়ে গেছে এমন আধা কিলোমিটার চওড়া চিকন এক জলপথ বা প্রণালী। সমুদ্রপথে এই প্রণালীতে কয়েকটা জাহাজ আড়াআড়ি ফেলে রেখে চীনকে এই পথে চলাচলে বাধা তৈরি করা যায় ও সম্ভব, এই হল আমেরিকান পরিকল্পনা। এমন সামরিক পরিকল্পনা যে নিস্তরঙ্গ পানিতে আমেরিকাই সবার আগে এঁটেছে, সেটা আমেরিকার বিরুদ্ধে কোন কাল্পনিক অভিযোগ একেবারেই নয়।

আমেরিকার সরকার-প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটা ভাল (বা কারো দিক থেকে খারাপ) রাজনীতি-চর্চা ও রেওয়াজ হল যে, আমেরিকান সরকার তার নীতি-পলিসির বহুকিছুই বা পুরোটাই গোপন রেখে দিতে পারে – দিয়ে থাকে ও দেয়। কিন্তু যে ইস্যুটা আমেরিকান সিনেট-সংসদে একবার যাচাই বা নিরীক্ষার জন্য উঠে আসা বা এসে যায় সেই ইস্যু সংশ্লিষ্ট সব তথ্য পাবলিকলি ওপেন করে দেয়া হয় বা হয়ে যায়। এমনকি তা (রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা না হলে) লাইভ টেলিকাস্টে সিনেটের ঐ ডেস্ক থেকে সরাসরি দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তেও প্রচারিত হতে পারে, সম্ভব। ২০০৮ সালের এমনই এক সিনেট-শুনানিতে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, চীনকে বাধা দেয়ার জন্য আমেরিকাই প্রথম ‘মালাক্কা প্রণালী’ নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করেছিল আর তাতে ভারতকে কাছে টেনে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে ব্যবহারের তথ্য আছে।


এখন মালাক্কা প্রণালীর কথা এখানে আনলাম এজন্য যে, ঐ প্রণালীকেন্দ্রিক আমেরিকান যুদ্ধ কৌশলেরই পালটা চীনের জবাব এবং একটা পদক্ষেপ হল  চীনের পাকিস্তানের সাথে সিপিইসি প্রকল্প নেয়া। কারণ চীন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে পারে না যে, তাকে আমেরিকা ঘিরে ধরছে, ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তাই চীন গোয়াদর বন্দর নির্মাণে আগ্রহী হয়েছিল। তবে চীনের ভুখন্ড থেকে সমুদ্রে প্রবেশের প্রধান ফটক পূর্ব দিকের বন্দরগুলো ফেলে ঠিক উল্টো দিকে চীনের পশ্চিমের সীমান্তকে সরাসরি গোয়াদর গভীর সমুদ্রবন্দরের সাথে যুক্ত করতেই সিপিইসি প্রকল্প নিয়েছিল। গত ২০১৩ সালে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল আর যা ২০১৫ সালেই চীন ও পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে প্রকল্পের চুক্তি সই করা হয়। চীনের এই পশ্চিম সীমান্তই দুর্গম জিনজিয়াং (উইঘুর Xinjiang Uyghur Autonomous Region) প্রদেশ, যার কাশগড় পর্যন্ত সিপিইসি যোগাযোগ প্রকল্প  বিস্তৃত।


সিপিইসি প্রকল্পে ‘
জঙ্গি’ হামলাঃ
খবরটা খুব সিম্পল। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে [পুরান নাম North-West Frontier Province] একটা বাসে বিস্ফোরণ-হামলায় অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনই চীনের প্রকৌশলী, যারা একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করছিলেন। সিপিইসি প্রকল্পের বড় বড় অংশই হল নানা বিদ্যুৎ প্রকল্প। আর ‘প্রকল্প’ বলতে এটা আসলে চার প্রদেশে বিভিন্ন ইপিজেড ফ্যাসিলিটি যেমন- গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, বিভিন্ন শোধনাগার ইত্যাদির সুবিধা স্থাপনা গড়ে তোলা যাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়ে আসে আর ওই হাইওয়ে ও বন্দর ব্যবহার করে আমদানি-রফতানির তৎপরতা জমে ওঠে।

কিন্তু সাবধান! এখানে বাসে হামলা বলতে কোন শহরে টাউন সার্ভিস বাসে হামলা নয়। এটা কয়েক কিলোমিটার জুড়ে এক প্রকল্প এলাকার ভেতরেই প্রকল্পের নিজেদের বাস ব্যবস্থা- বিদেশী প্রকৌশলী টেকনিক্যাল লোক, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বা প্ল্যান্টের শ্রমিকদের কাজে আনা-নেয়ার বাস। এই বাসের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যাগুলো ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান আর তাতে বাস নদীর তীরে খাদে ফেলে দেয়া হয়েছে।

Rescue workers and onlookers gather around a wreck after a bus plunged into a ravine following a bomb explosion, which killed 12 people including 9 Chinese workers, in Kohistan district of Khyber Pakhtunkhwa province on July 14, 2021. (Photo by STRINGER / AFP)

এশিয়া টাইমসে পাকিস্তানের সাকিলের রিপোর্টঃ
এফএম সাকিল [FM Shakil] হংকং থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়া টাইমসে’ নিয়মিত লেখেন। আমেরিকান স্বার্থের পারস্পেকটিভ থেকেই তিনি সাধারণত লিখে থাকেন। যেমন – এবারেই লেখার শিরোনাম দিয়েছেন তিনি, “ইমরান সিপিইসি বিস্ফোরণ ইস্যুতে চীনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন” । আসলে ব্যাপারটা হল, চীন স্বভাবতই এই চীনা নাগরিক হত্যায় খুবই কড়া মনোভাব নিয়েছে। চীনা তদন্তকারী স্টাফ গ্রহণে পাকিস্তান রাজি হয়েছে এবং চীন ঘটনায় ‘কেস সলভ করে’ জড়িতদের কড়া শাস্তি দিতে চীন-পাকিস্তান একসাথে কাজ করবে জানিয়েছে [China sends expert criminal investigators to Pakistan, urges severe punishment for perpetrators……]। এফএম সাকিল আরো লিখছেন, ‘পাকিস্তানের কর্মকর্তারা এ ঘটনাকে প্রথম থেকেই ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামী মুভমেন্টের (ইটিআইএম) নোংরা কাজ বলে বর্ণনা করছিলেন” [Pakistani officials have since indicated it was the dirty work of the East Turkestan Islamic Movement (ETIM), ……]।’ তা এখন বিরাট ঘটনা হিসেবে হাজির হয়ে গেছে।
অবস্থা সামলাতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও কড়া কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। যেমন- সিপিইসি প্রকল্প পরিচালিত হয় সিপিইসিএ [CPEC-A] নামে এক সরকারি অথরিটি বা কর্তৃপক্ষের অধীনে। গত দুবছর ধরে [ending the military’s de facto two-year control…] এই অথরিটির চেয়ারম্যান ছিলেন পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া। অনুমান করা হয়, প্রকল্পের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব দেয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার গত সপ্তাহে ইমরান এক স্বনামধন্য এক ব্যবসায়ী খালেদ মনসুর  যিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও যার বড় প্রকল্পের ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা আছে, নিজের মালিকানাধীন ও সরকারি প্রজেক্ট ম্যানেজ অভিজ্ঞতা রাখেন – সেই খালেদ মনসুরকে “প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী” [SAPM] হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রীকে সিপিইসি প্রকল্প প্রসঙ্গে সহায়তা করবেন। আর এই নিয়োগের পরপরই জেনারেল বাজওয়া নিজেই সিপিইসি অথরিটির চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তাই পাকিস্তানের রেওয়াজ অনুসারে, সংশ্লিষ্টদের অনুমান যে অচিরেই ব্যবসায়ী খালেদ মনসুর সিপিইসি অথরিটির চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন। আর লেখক সাকিল প্রধানমন্ত্রী ইমরানের এই ব্যাপারটাকেই ক্ষুব্ধ চীনকে তার ঠাণ্ডা করার প্রয়াস বলে দেখেছেন। তবে ঘটনা আরো আছে।

US President Donald Trump (L) listens to US Secretary of State Mike Pompeo during a Cabinet Meeting at the White House in Washington,DC. -(Photo by Brendan Smialowski / AFP)

ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামী মুভমেন্টঃ
ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামী মুভমেন্টের (ETIM বা ইটিআইএম); কারা এরা? ভয়েজ অব আমেরিকা জানাচ্ছে, [US Removes Anti-China Militant Group From Terror List] ২০০৩ সাল থেকে ইটিআইএম চীনা উইঘুর সশস্ত্র সংগঠন যারা আমেরিকার জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় ছিল [Washington listed ETIM as terrorist group in 2003. ]। মানে? এটা আগে ছিল এখন নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, তিনিই এক সকালে ETIM এর নাম আমেরিকার অফিশিয়াল “জঙ্গি সংগঠনের তালিকা” থেকে কেটে দেন। ৭ নভেম্বর ২০২০ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল। এর আগের দিন তিনি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। কেন?

ট্রাম্পের অনেক বদনাম, ‘ভদ্রলোকেরা’ তাকে দেখতে পারেন না। তিনি গাড়োল গাঁইয়া ধরনের মানুষ এবং সর্বোপরি তিনি জাতিবাদী; সে জন্যই নাকি? এটা শতভাগ মিছা কথা। এমনিতেই ডেমোক্র্যাটরা মোমের পালিশ করা মুখ নিয়ে ঘোরেন বা থাকেন; তাদের মনের কথা সহজে পড়া যায় না। এর বিপরীতে গোঁয়ার ট্রাম্প সবার সামনে ও চোখেই উন্মুক্ত ব্যক্তিত্ব। তাই তার বদনাম বেশি। তার বিপরীতে বাইডেন ‘ছুপা’। চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের জাতিবাদী লড়াই, চীনাপণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপের লড়াই   – এক কথায় ‘ট্রেড ওয়ারের’ বা বাণিজ্যযুদ্ধের কথা সবাই জানে। অথচ বাইডেন এখন ট্রাম্পের সেই নীতিই বাইডেন এখন অনুসরণ করে চলেন।

ট্রাম্প সেই প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধের ভেতর প্রথম এক “ইতর পদক্ষেপ” এনেছিলেন। সেটাই হল, চীনকে তিনি দেখতে পারেন না, শত্রু মনে করেন – সেই চীনের বিরুদ্ধেই ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ’ তোলার ব্যবস্থা করেন তিনি। তিনি “অসতভাবে” এই খেলা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কীভাবে?

এতে বিপর্যয় কী ঘটে গিয়েছিল?
চীনের সাথে ট্রাম্পের আমেরিকার  স্বার্থবিরোধ আছে, স্বাভাবিক! কিন্তু চীনের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যবিরোধ আছে বলে কী সেই (রাজনৈতিক) স্বার্থের ভিত্তিতে ট্রাম্প ঠিক করবেন যে উইঘুরের ইটিআইএম [ETIM]  এই সশস্ত্র গ্রুপটাকে জঙ্গি বলবেন কী বলবেন না, জঙ্গী তালিকায় রাখবেন কিংবা বের করবেন?  তার মানে আগামীতে কেউ আলকায়েদার সমর্থক না হলেও সন্দেহবশত আমেরিকা তাকে টর্চার করলে এবার চীন কি তার পক্ষে কোনো মানবাধিকার গ্রুপ নিয়োগ করা শুরু করবে? অর্থাৎ কারও মানবাধিকার লঙ্ঘণ হয়েছে – একথা আমেরিকা বলবে কিনা তা নির্ভর করবে সেটা আমেরিকার শত্রুর বিরুদ্ধে যাবে কীনা; যদি যায় তাহলে আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্ঘণ বলে হৈ চৈ তুলবে? এটা কী কোন রাস্ট্রের মানবাধিকার বোধ হতে পারে? নাকি এটা মানবাধিকার বেচা-বিক্রি এটা?

বাইডেন এটাই শুরু করেছেনঃ
উইঘুরের ETIM কে আমেরিকা ১৮ বছর ধরে নিজের জঙ্গী সংগঠন তালিকায় রেখেও ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্যবিরোধে ব্যবহারের জন্য এটা আর জঙ্গী নয় বলে রায় দিয়েছিলেন।  আর এই অনৈতিক সিদ্ধান্তই পরে বাইডেন পরে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে নিয়ে আসেন, কারণ ট্রাম্প মাত্র পরে আড়াই মাস ক্ষমতায় ছিলেন।
আমেরিকা ইসলামী সশস্ত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি তালিকা’ বানায়। জাতিসঙ্ঘেরও এমন নিজের আলাদা একটা ‘জঙ্গি’ তালিকা আছে। তবে জন্ম থেকেই তালিকার সমস্যা হলো, টেররিজম বা জঙ্গি কাজের সংজ্ঞা কী ও কোনটা- তা আজও না পশ্চিমা কোনো দেশের কাছে, না জাতিসঙ্ঘের কাছে আছে। তবু এ নিয়ে কাজ করার মত একটা ঐকমত্য তাদের মধ্যে দেখা যেত সেকালে। যেমন  – চীন বা রাশিয়ার চোখে যারা জঙ্গি তারা পশ্চিমা অন্যান্য দেশ বা ইউএন এদের চোখেও জঙ্গি বলে তালিকায় উঠতে বড় কোনো ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। অন্যভাবে বললে, চীন বা রাশিয়া আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশের মত নয়, বরং পরিষ্কার আলাদা। তাদের স্বার্থও অনেক জায়গায় অনেক আলাদা হলেও চীন বা রাশিয়ার তালিকায় থাকা জঙ্গিদের আমেরিকা নিজ বাণিজ্য স্বার্থে নিজেদের তালিকার বাইরে রাখবেন এমন চল – এই জুয়াচুরি তখন চালু ছিল না।

এ কারণে উইঘুর ETIM সংগঠন ২০০৩ সাল থেকেই আমেরিকার ও জাতিসঙ্ঘের জঙ্গি তালিকায় কোনো  নড়াচড়া ছাড়াই বজায় ছিল। পম্পেও যেই নামটাই তালিকাচ্যুত করেছিলেন আমেরিকার বাণিজ্যস্বার্থে, অনৈতিকভাবে।
ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে তার বাণিজ্য লড়াইয়ের উপাদান হিসেবে কার নাম জঙ্গি তালিকায় ঢুকাবেন বা বের করবেন এমন কাজ একেবারে প্রত্যক্ষভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহার। আর এমনটা শুরু করেন প্রথমে তিনিই। তবে সেটা গত ৭ নভেম্বর মানে ট্রাম্পের ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র আড়াই মাস আগে। তাই ট্রাম্প এর ব্যবহারকারী হতে সময় পাননি। পরে এর প্রধান অপব্যবহারকারী প্রেসিডেন্ট হন বাইডেন।

আরেকটা টেকনিক্যাল ও রেওয়াজের সমস্যা ছিল।
এমনিতেই ব্যাপারটাকে আগে টেকনিক্যাল প্রবলেম মনে করা হত। যেমন – ধরা যাক বেলুচ কোনো সশস্ত্র রাজনৈতিক গ্রুপ। এই সংগঠনের ওপর নির্যাতন করে ধরা যাক, পাকিস্তান মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে – এমন অভিযোগ আনতে আমরা পাকিস্তানের বাইরের কোনো মানবাধিকার সংগঠনকে দেখিনি। বিশেষত পাকিস্তানের তালিকায় যদি ওরা সশস্ত্র ও নিষিদ্ধ সংগঠন হয়। ফলে এতদিনের রেওয়াজ ছিল, কোন গ্রুপ সশস্ত্র হলে আর মানবাধিকার গ্রুপ তার পক্ষে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করত না।   এড়িয়ে যেত। সোজা কথা কোনো জনগোষ্ঠী বা তাদের সমর্থিত কোনো সশস্ত্র গ্রুপের পক্ষে কেউ মানবাধিকার নিয়ে দাঁড়িয়ে যেত না। বাইডেন সেই রেওয়াজ ভেঙেছেন এবং ভেঙেছেন রাষ্ট্রের বাণিজ্যস্বার্থে, চীনের সাথে পেরে উঠতে!

অর্থাৎ আগে ভারতের আসামের উলফাকে বাংলাদেশ যদি অস্ত্র আনতে সহায়তা দিত তাহলে আর বাংলাদেশের কোন মানবাধিকার গ্রুপ  উলফার মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে দাড়াত না।  এড়িয়ে যেত। ট্রাম্প- পম্পেও-বাইডেন এই রেওয়াজ ভেঙ্গেছে শুধু না। কার মানবাধিকার রক্ষা বলে তারা আওয়াজ তুলবে তা নির্ভর করবে সেই ইস্যুটা তুলে আমেরিকার বাণিজ্যিক লড়াইয়ে ফয়দা আছে কিনা!  যার সোজা মানে কারও মানবাধিকার আসলেই লঙ্ঘণ হয়েছে কি না তাতে কিছুই এসে যায় না!

কেউ স্রেফ মুসলমান বলে কারণে আমেরিকা রাষ্ট্রের সন্দেহের শিকার হতে পারে।সন্দেহবশত, তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া বা কমপক্ষে রিমান্ড সহ্য করতে হওয়া কিংবা  রেনডিশন [rendition] (অন্য দেশে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে টর্চারে কথা বের করা) ইত্যাদি অনেক কিছুই সহ্য করতে হয়েছে, এমন উদাহরণ হয়ত কম নয়। [দেখুন ওবামার রেনডিশন প্রগ্রাম প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ।]

এখন ট্রাম্প ও বাইডেন তাদের চীনের সাথে বাণিজ্যবিরোধ আছে বলে তারা সেই রাজনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে ঠিক করবেন উইঘুরের ETIM জঙ্গি কি জঙ্গি নয়? তার মানে আগামীতে কেউ আলকায়েদার সমর্থক না হলেও, সন্দেহবশত তাকে টর্চার করা হলে চীন কি তার পক্ষে মানবাধিকার গ্রুপ নিয়োগ করা শুরু করবে? বাইডেন এই অনৈতিকতা চালু করেছে!

বাইডেন এটাই শুরু করেছেন!
তাই আগে ট্রাম্প ‘রায়’ দিলেন উইঘুর ETIM-এরা আর চীনের জঙ্গি সংগঠন নয়। আর বাইডেন এসে এরপর যোগ করলেন – চীন উইঘুরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।
অথচ বাইডেনকে মনে রাখতে হবে মানবাধিকার নিজ বাণিজ্যস্বার্থের হাতিয়ার বা টুলস নয়। এটা অপব্যবহার! হেনরি কিসিঞ্জার বাইডেনদের এই সস্তা বাণিজ্য-বুদ্ধিতে ‘মানবাধিকার’ বুঝতে বলেননি।

শুধু তাই নয়। পম্পেও চাতুরিতে ETIM-এর নাম জঙ্গী তালিকা থেকে বাদ দিলেও তখনও জাতিসংঘের তালিকায় এটা তখনও আগের মতনই জঙ্গী সংগঠন। ফলে সেটা রক্ষার দায় তখনও আছে। একারণের চীন এই প্রসঙ্গটা তুলে তার আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু সেকথা শুনে নাই।

আরো বিপজ্জনক ব্যক্তিত্ব
তাও বাইডেন এখানে আটকে সীমাবদ্ধ থাকলেও চলত। বিদেশে চীনা প্রকল্প মানেই সেখানে অন্তর্ঘাতমূলক কাজ চালাতে হবে; বা উইঘুর ETIM-কে দিয়ে সে কাজ করাতে হবে – বাইডেন এখন এমন জায়গায় চলে যাচ্ছেন! এটা কি কোনো বাণিজ্য যুদ্ধ? না কোনো মানবাধিকার রক্ষা? অথবা এটা কোনো ‘জঙ্গিবাদ’? বাইডেন কি নিজেই ভারতকে বগলে নিয়ে এই নয়া ‘জঙ্গিবাদের’ নেতা হতে চলেছেন না?

কেন ভারতের নাম?
বাংলাদেশের চীনা প্রকল্প মানে অন্তর্ঘাত, চীনা প্রকৌশলীর অপমৃত্যু! কিংবা ভারতীয় নাগরিক গ্রেফতার!  “সর্ষের মধ্যে ভূত আছে কি না, দেখতে হবে” – বলে বাংলাদেশের সেতুমন্ত্রীর মন্তব্য।’ এসব কিসের আলামত? এটা কী কোনো বাণিজ্যযুদ্ধ না প্রতিযোগিতা? এর মানে বাইডেন, বগলে ভারতকে নিয়ে কি এখন ‘কোন ধরনের নেতা’ হতে চলেছেন?

ETIM-কে মানুষ খুন করতে উৎসাহ বা পথ করতে দেয়া কি একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে মানায়? নাকি এটা দেউলিয়াত্বের লক্ষণ!

[ উইঘুরে চীনের দায়দায়ীত্বও কম নয়। সেটা সে পালন করেছে তা বলা যাবে না। নুন্যতম প্লুরাজিম বা একাধিক মত অবস্থানের পাশাপাশি থাকার কোন সুযোগ চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এখনও নাই। এটা সবসমস্যার গোড়ার সমস্যা এটা। এমনকি এটাই যেকোন সমাধান না পাবার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। তবে সে প্রসঙ্গ নিয়ে আলা্দা করে লিখতে হবে। ]

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

 

[এই লেখাটা  গত  ১৫ আগষ্ট ২০২১, দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ওয়েবে ও পরদিন প্রিন্টে   “বাইডেন, বগলে ভারতকে নিয়ে কী হলেন? – এই শিরোনামে  ছাপা হয়েছিল।
নয়াদিগন্তে ছাপা হওয়া লেখাগুলোকে আমার লেখার ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ বলা যায়।  আর আমার এই নিজস্ব সাইটের লেখাটাকে সেকেন্ড ভার্সান হিসাবে এবং  থিতু ভাষ্য বলে পাঠক গণ্য করতে পারেন। পরবর্তিতে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ লেখাটাকেই এখানে আরও অনেক নতুন তথ্যসহ বহু আপডেট করা হয়েছে। ফলে সেটা নতুন করে সংযোজিত ও এডিটেড এক সম্পুর্ণ নতুন ভার্সান হিসাবে ও নতুন শিরোনামে এখানে আজ ছাপা হল। ]

Leave a comment