অপরাধএক্সক্লুসিভবাংলাদেশরাজধানী

ইউরোপের নামে ভারতে মানব পাচার,তিনজন গ্রেপ্তার

অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কলকাতার টর্চার সেলে বাংলাদেশি নাগরিকদের আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। আজ মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব–৪ এ কথা জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে পাচারের শিকার দুই ব্যক্তিকে হাজিরও করেছিল তারা। র‌্যাব জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তারা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মল্লিক রেজাউল হক সেলিম (৬২), বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। তিনজনই একসময় অভিবাসী শ্রমিক ছিলেন।

কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, এই চক্রটি কয়েক বছর ধরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া পাসপোর্ট, নকল ভিসা, আবেদনপত্র ও মানবপাচার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র জব্দ করা হয়।তিনি বলেন, সেলিম এই চক্রের হোতা, তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন মল্লিক ও নিরঞ্জন। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও সাত জন তাদের সঙ্গে জড়িত।

মানব পাচারকারী এই চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যেতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের নিশানা করত চক্রটি। তাদের খপ্পরে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ রয়েছেন।

চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স ও মাল্টায় বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করত। কিন্তু প্রতিশ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার বদলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হতো কলকাতায়। সেখানে ভুক্তভোগীদের নির্যাতন করে অডিও ও ভিডিও দেশে পাঠিয়ে চক্রের সদস্যরা টাকা আদায় করতেন।

অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। পরে তাদের পাশের দেশে পাচার করে দেয়। ওই সব দেশে ভারত থেকে ভিসা পাওয়া সহজ, এমন বুঝিয়ে তাদের প্রতারিত করে।র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি তাদেরকে ভারতে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে, মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে সেই ভিডিও পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে অর্থ ও মুক্তিপণ আদায় করে।

সম্প্রতি ভারত থেকে ফিরেছেন এমন একজন ভুক্তভোগী মো জাহাঙ্গীর। তিনি র‌্যাব–৪–এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীর চক্রের সদস্য মল্লিক রেজাউল হক সেলিম ও বুলবুল আহমেদ মল্লিকের খবর পান। তাঁরা মো. জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রেলিয়া ও তাঁর ভাগনে আকাশকে নেদারল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে ৩৪ লাখ টাকা দাবি করেন।

ওই বছরের ১০ অক্টোবর মামা–ভাগনে দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা দেন। নকল ভিসা দেখিয়ে পরে এই দলটি তাঁদের ভারতে পাচার করে দেয়। কলকাতার টর্চার সেলে আটকে রেখে তারা তাঁদের বেদম মারধর করে। সাড়ে ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে পরে তাঁরা দেশে ফেরেন।পাচারকারী চক্রের অপর সদস্য নিরঞ্জন পাল পতুর্গাল ও মাল্টা পাঠানোর নাম করে বিল্লাল হোসেন, রবিন হোসেন ও শাহিন খানকে ভারতে পাচার করেন। টর্চার সেলে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ছয় মাস পর তাঁরা ফিরে আসেন।

আসামী নিরঞ্জন পালের বাড়ি নবাবগঞ্জ। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর রোমানিয়ায় যান। ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে গার্মেন্টস পণ্য ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৭ সালে এ দেশে থাকা সব সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি ভারতে চলে যান। কলকাতার টর্চার সেলগুলো মূলত তিনিই চালান। ভুক্তভোগীরা বলেন, টর্চার সেল পরিচালনাকারীদের সঙ্গে নিরঞ্জন নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বাংলাদেশ ও ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করেন নিরঞ্জন। কলকাতায় তাঁর অনেক বিষয়সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

আরেক আসামী রেজাউল হক ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে সৌদি আরবে যান। তিন বছর পর দেশে ফিরে তৈরি পোশাক ও মানব পাচারে যুক্ত হন। র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে ১৯৯২ সালে রেজাউল আবার দুবাইতে যান। সেখানেই তিনি মূলত ভারতের মানব পাচারকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে দেশে ফেরার পর কক্সবাজারে মাছের ব্যবসার আড়ালে মানব পাচার করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও মানব পাচারের মামলা ছিল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিপুল সম্পত্তি তাঁর। আছেন দুই স্ত্রী ও ছয় সন্তান।

বুলবুল আহমেদ মল্লিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কারখানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে প্রথমে আমদানি–রপ্তানি ও পরে মানব পাচারে যুক্ত হন। পল্লবীর পলাশনহরে তাঁর সাততলা একটি বাড়ি, উত্তরা, মিরপুর ও হাজীপুরে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিজমা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা আছে।

আরও পড়ুন:

Back to top button
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে ‘হানি ট্র্যাপ’ শিলাস্তি রহমান ‘Pushpa 2’ is coming to Bangladesh in Hindi ইব্রাহিম রাইসি যেভাবে ৫০০০ মানুষকে হত্যা করেছিলো Bangladeshi mountaineer Babar Ali climbs Mount Everest