1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ইতিহাস ডাক দিয়ে যায়

  • আপডেট সময় রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১

:: সুখেন্দু সেন ::
ইতিহাস ডাক দিয়ে যায় কারো কণ্ঠে। শতাব্দীর প্রবাদপুরুষ, যার জন্ম না হলে একাত্তরের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হতো না, সেই ক্ষণজন্মা মহামানবের বজ্রকণ্ঠেই বাঙালির স্বদেশ আবিষ্কার। ৭ মার্চ শুধু একটি ভাষণ বা আহ্বানেই সীমাবদ্ধ নয়, কোটি জনতার সাথে অন্তরের গভীরতম অথচ প্রকাশ্য কথোপকথন। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বাঙালির অশ্রু, রক্ত আর গৌরবগাঁথার সাথে একাত্তরের মুক্তি পাগল বাঙালির ঐক্যসূত্র, এক সুদৃঢ় সেতুবন্ধন। বাঙালি জেগে উঠলো সিরাজের দেশপ্রেমে, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার শৌর্যে, ক্ষুদিরামের ফাঁসির দড়ির ঐশ্বর্য্য,ে সূর্যসেন-প্রীতিলতার আত্মদানের গৌরবে, সালাম, রফিক, বরকত, মনু মিয়া, মতিউর, আসাদ, সামসুজ্জোহার রক্ত আর অজস্র আত্মত্যাগের মহিমায়।
৭মার্চ হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহের কোনো আকস্মিকতা নয়। লক্ষকোটি জনতার হৃদ¯পন্দন অনুভবে, অন্তরের ভাষা পাঠ করে, সাড়ে সাতকোটি বাঙালির আস্থা অর্জনের নিরন্তর সাধনার ফসল এই ৭ মার্চ। প্রতিদিন প্রতিকর্মে বাঙালির জন্য নিখাঁদ ভালবাসার সাধনা বুকে ধারণ করেই না একদিন ৭ই মার্চ স্বাধীনতা ঝলসিত তর্জনী আকাশ ফুঁড়ে দিয়ে ডাক দেয়া যায়– “ভাইয়েরা আমার”।
উনিশ মিনিটে এক হাজার একশত সাতটি শব্দের শাণিত কথামালায় স্বাধীন বাংলার এক ঝলসিত প্রচ্ছদপট এঁকে দিয়ে তবেই না সেই অমোঘ মন্ত্রের উচ্ছারণ– “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”।
রাজনীতির এই কবিশ্রেষ্ঠের উচ্চারিত পঙক্তিমালা কী সুচতুর বাক্যবিন্যাসে স্বাধীনতার প্রকাশ্য ঘোষণা হয়ে মহাসমুদ্রের শতবর্ষের কল্লোলের মতো আছড়ে পড়লো টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। নগর, বন্দর জনপদে, বনান্তে, সীমান্তে, পাহাড়ের খাঁজে, অফিসে, আদালতে। ছড়িয়ে পড়লো সেনা ছাউনিতে, সীমান্ত চৌকিতে, পুলিশ ব্যারাকে, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চি জমিতে একযোগে ঘটে গেলো প্রাণের বিস্ফোরণ। বাঙালি জেগে উঠলো। অফিসের কেরানি, জাহাজ ঘাটের কুলি, মাঠের কৃষক, নদীর মাঝি, জেলে তাঁতী, কামার, কুমোর, ছাত্র শিক্ষক, উকিল, মোক্তার, ডাক্তার কবিরাজ, শিল্পী, কবি, বুদ্ধিজীবী, কনস্টেবল থেকে বড় দারোগা, সেপাই থেকে মেজর স্বাধীনতার সে মোহন বাঁশির টানে এক কাতারে মিলে গেলো। মেরুদণ্ড সোজা করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো প্রতিরোধ প্রত্যয়ে জীবন বাজি রেখে।
২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে এ ভাষণ থেকে শিক্ষা নিতে পারে সে জন্য মেমোরিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যশনাল রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে রাখে।
যে ভাষণ একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে লক্ষকোটি মানুষকে মরণ সাগর পাড়ি দিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা যোগাতে পারে, যে ভাষণের ছত্রে ছত্রে মুক্তির মন্ত্র, যার প্রতিটি শব্দ শক্তির উৎস, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর অন্যতম সেই অগ্নিস্বর ভাষণ কারো কোনো স্বীকৃতি বা কারো কাছ থেকে পৃথক কোনো মর্যাদা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে না। এ ভাষণ স্বমহিমায় অমরত্ব লাভ করে আছে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতায়। আমাদের গর্ব এখানেই, ৭ মার্চের ভাষণ বাংলার ইতিহাস পেরিয়ে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব ইতিহাস ঐতিহ্যের অঙ্গিভূত হয়ে বিশ্ব স¤পদে পরিণত হয়েছে এবং ইউনেস্কোর মূল্যবান ঐতিহ্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। যে ভাষণটিতে বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা বর্ণিত হয়েছে, রয়েছে নির্দেশাবলি, রয়েছে স্বাধীনতার মর্মকথা, যে ভাষণে বাঙালির হৃৎজাগরণ, স্বাভাবিকভাবেই তা ছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তার আতঙ্ক ও মর্মব্যথার কারণ। পচাত্তরের পর পাকিস্তানিদের দুঃখে দুঃখিত অর্বাচিন মুর্খদের শাসনামলে দীর্ঘদিন এই ভাষণটি নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো। ইতিহাসের কী অপূর্ব প্রতিশোধ সে ভাষণটি এখন শুধু বাঙালিরই নয়, বিশ্বজনীন। পরম মর্যাদায় তা সংরক্ষিত করে রাখা আগামী বিশ্বকে প্রাণিত করার জন্য প্রধান বারোটি ভাষায়। ৭ই মার্চ আমাদের আত্মজাগরণের পাঠ হোক বারংবার।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com