গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বাড়ি থেকে মিলল সোনার গয়না। তাতে আইনজীবী মিতালি ঘোষকে খুনের মোটিভের অভিমুখ ঘুরল। এর আগে সোনার গয়না লুটের তত্ত্ব উঠে আসে আইনজীবী খুনে। কিন্তু, ঘর থেকে সোনার গয়না মেলায় লুটে বাধা পেয়ে খুনের ভাবনা থেকে সরে আসছে পুলিস। তবে, তদন্তে বেশকিছু তথ্য উঠে আসছে। আইনজীবীর খুব পরিচিত কেউ খুনে জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কার কার সঙ্গে মিতালি দেবীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সে ব্যাপারে বিশদে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে আইনজীবীর সঙ্গে কারও কোনও বিষয়ে অশান্তি হয়েছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিস। আইনজীবীকে খুনে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। জেলার পুলিস সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, মহিলার ঘরের একটি বাক্স থেকে সোনার গয়না মিলেছে। তবে, আরও সোনার গয়না ছিল কিনা তা পরিবারের লোকজন বলতে পারবেন। তদন্তে নানা তথ্য উঠে আসছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বুধবার কলকাতার বেলগাছিয়া ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটারির একটি দল জামালপুর থানার আঝাপুরে মিতালি দেবীর বাড়িতে আসে। যেখানে আইনজীবীর মৃতদেহ পড়েছিল সেখান থেকে রক্তের নমুনা ও মাথার চুল সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ঘরের ভিতরে ও বাইরে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন তাঁরা। ফরেন্সিক দলের সদস্যরা বাড়ির ছাদ ঘুরে দেখেন। খুনি কোন দিক দিয়ে ঘরে ঢুকেছিল তা জানার চেষ্টা করেন তাঁরা। আইনজীবীর মৃতদেহ উদ্ধারের সময় ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। সে কারণে খুনি কোন পথে বের হতে পারে তার আন্দাজ নেওয়ার চেষ্টা করে ফরেন্সিক দল। তবে, খুনি যে মিতালি দেবীর পরিচিত এবং ঘরের অবস্থানের বিষয়ে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল সে ব্যাপারে নিশ্চিত ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। আইনজীবীর ঘর থেকে সোনা উদ্ধার হওয়ায় বিভ্রান্ত করতে জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করা হয় কিনা তা ভাবাচ্ছে পুলিসকে। আলমারি থেকে কোনও নথিপত্র চুরি গিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরই খুনের মোটিভ কিছুটা পরিস্কার হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। মিতালি দেবীর হাত-পা বাঁধা নিয়েও ধন্দে পুলিস। তবে, খুনের আগে নিজেকে বাঁচাতে মিতালি দেবী আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বলে অনুমান পুলিসের। খুনির সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়েছিল বলে মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তবে, একজনের পক্ষে মিতালি দেবীকে কাবু করে তাঁর হাত-পা বাঁধা সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস পুলিসের। মিতালি দেবীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু হয়েছে। সেখান থেকেও কিছু তথ্য মিলতে পারে বলে মনে করছে পুলিস। আইনজীবীদের কাছ থেকেও তাঁর সম্পের্ক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা নানা ধরণের ছাপ পেয়েছেন। সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরাও বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ময়না তদন্তের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখার পরই আইনজীবী খুনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে বলে আশা পুলিসে।
এদিকে আইনজীবী খুনে পুলিসি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামছেন আইনজীবীরা। বুধবার বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন শোকসভার আয়োজন করে। তারপর আইনজীবীরা আর কাজে যোগ দেননি। বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে পেন ডাউন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বার কাউন্সিল। এদিন বার কাউন্সিলের সভায় এ ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বার কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধি দল পেন ডাউন কর্মসূচির দিন বর্ধমানে আসবে। বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের নিয়ে প্রতিনিধি দলটি পুলিস সুপারের সঙ্গে দেখা করবে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, বার কাউন্সিল বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। প্রকৃত দোষী যাতে ধরা পড়ে সেই দাবি জানাচ্ছি। এদিকে, আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে এদিন সমস্যায় পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। পুজো অবকাশের পর এদিনই আদালতের কাজকর্ম শুরু হয়েছে। আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে মামলার শুনানি হয়নি। জামিনের আবেদনের সওয়াল নিজেরাই করে ধৃতরা। বর্ধমান জেলা ও দায়রা আদালতে ১৩টি আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। গ্রেপ্তারের পর জামিনের আবেদনের ২টি শুনানি ছিল। পকসো আদালতে ১২টি মামলার শুনানি ছিল। প্রথম জেলা ও দায়রা আদালতে ৬টি মামলার শুনানি ছিল এদিন। সিজেএম আদালতে আইনজীবীদের অনুপস্থিতির কারণে কোনও এফআইআর হয়নি। দেওয়ানি আদালতেও আইনজীবীদের অনুপস্থিতির কারণে শুনানি হয়নি। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, আইনজীবী খুনের ঘটনায় কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীর ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা ঘটলে তা অত্যন্ত চিন্তার। বিষয়টি বিচারপ্রার্থীরা বুঝবেন। একটু সমস্যা হলেও এটা তাঁরা মেনে নেবেন বলেই মনে হয়।
Tags Forensic Forensic experts lawyer murder
Check Also
পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের বাংলো ক্রোকের নির্দেশ দিল আদালত
গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমির দাম না মেটানোয় পূর্ব …