ওমিক্রন: সতর্ক বিজ্ঞানীরা, চলছে গবেষণা

করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে এলার্ট বা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই ভ্যারিয়েন্ট বর্তমান প্রচলিত টিকার কার্যকারিতার বিরুদ্ধে কি পরিমাণ হুমকি সৃষ্টি করে তা নির্ধারণের জন্য এক রকম প্রতিযোগিতা করছেন তারা। এ খবর দিয়ে অনলাইন ন্যাচার বলেছে, সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে এই ভাইরাস দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত হয়েছে বোতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং, বৃটেন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে। এর ফলে সারাবিশ্বে নানারকম বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরাও বসে নেই। তারাও ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা জানার চেষ্টা করছেন, বর্তমানে যে টিকা আছে তা থেকে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মে, তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণাতে পারে কিনা এই ভাইরাস। অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম বা বেশি ভয়াবহ রোগ সৃষ্টি করে কিনা তাও জানার চেষ্টা করছেন তারা। এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব দ্য উইটওয়াটার্সর‌্যান্ড-এর ভাইরাস বিশেষজ্ঞ পেনি মুর বলেছেন, আমরা ঝড়ো গতিতে ছুটছি। তার গবেষণাগারে টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আগের সংক্রমণ সম্পর্কে গবেষণা চলছে। তিনি বলেছেন, নতুন করে সংক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। টিকা নিয়েছেন এমন কারো কারো ক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটেছে। ফলে এখন এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব কাউজুলু-নাটাল এর সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক চিকিৎসক রিচার্ড লেসেলস বলেছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছুই জানি না। ২৫ শে নভেম্বর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। আরো বলেন, রূপান্তরিত ভ্যারিয়েন্টের যে প্রোফাইল তা আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরো জানতে আমাদেরকে আরো অনেক কাজ করতে হবে।

গত ২৬ শে নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯’কে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ আখ্যায়িত করে নামকরণ করেছে ওমিক্রন। এর ফলে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা, আলফা, বেটা ও গামার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন এই নাম। গবেষকরা ওমিক্রনের জিনোম সিকুয়েন্স ডাটা সংগ্রহ করেছে বোতসোয়ানা থেকে। এই ভ্যারিয়েন্টকে জানা খুবই কঠিন বিষয়। কারণ, এর স্পাইক প্রোটিতে কমপক্ষে ৩০ রকম পরিবর্তন আছে। এর অনেক পরিবর্তন পাওয়া গেছে ডেল্টা এবং আলফা ভ্যারিয়েন্টে। এন্টিবডির বিরুদ্ধে সংক্রমণের ক্ষমতা রয়েছে এদের। দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশে নতুন পাওয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন এলার্ম বেল বাজিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে নভেম্বরে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্কুলগামী এবং যুব শ্রেণির মধ্যে তা বেশি। ইউনিভার্সিটি অব কাউজুলু-নাটালের বায়োইনফরমেটিসিয়ান টুলিও ডি ওলিভেইরার নেতৃত্বাধীন একদল গবেষক এই ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকুয়েন্স ও অন্যান্য জেনেটিক বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, গুটেং থেকে যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল তার মধ্যে ৭৭ জনের সবাই বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এসব নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১২ থেকে ২০ শে নভেম্বরের মধ্যে। বিশ্লেষকরা এই ভ্যারিয়েন্টের আরো নমুনা সংগ্রহ নিয়ে গবেষণা করছেন।