“সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে … সহজ কথা যায় না বলা সহজে”

আচ্ছা, “ম্যানার্স” কি জিনিস? খায়? নাকি, মাথায় দেয়? ছোটবেলায় গুড ম্যানার্স, ব্যাড ম্যানার্স বুঝতাম না, শুধু “ম্যানারিজম” কথাটা নানান জায়গায় শুনে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল। তাকে চিনেছি আরো পরে যখন জানলাম ম্যানার্স আর ম্যানারিজম এক নয়। আবার এও জানলাম ব্যাড ম্যানার্স আর ম্যানারিজমও নাকি হুবহু একই বিষয় নয়।

যাকগে, বছর বিশেক মাষ্টারি করার পরে নাকি কোর্টে আর স্বাক্ষী নেয় না। আমার হয়েছে পনেরো বছর। এখনো কিছুটা ভালই আছি সম্ভবত। তবে পার্শিয়াল ট্রাবলস মনে হয় প্রকোট হচ্ছে। এই যেমন, মূল কথায় না গিয়ে লিখলাম আনুষাঙ্গিক আরো এদিক ওদিকের কিছু কথা।

ফোনালাপ নিয়ে কিছু লিখতে চাচ্ছিলাম। একসময় সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকের একান্ত প্রাইভেট ডায়রির মত বেডরুম-বাথরুম টাইপের সব কথা লেখা নিয়ে দুটো লেখা লিখেছিলাম। এখন আর কাউকে সরাসরি কিছু ধরিয়ে দেই না সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুবার যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। দুজনের সাথে তো সম্পর্ক প্রায় ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে।

মূল কথায় আসা যাক। বেশ কবার জীবনে এমন হয়েছে, ব্যাগ লাগেজ-লকারে দিয়ে বাসে উঠতে যাব, পরিচিত কারো ফোন এল এটা জানার জন্য আমি বাসে উঠেছি কিনা। কিংবা পরীক্ষার হলে ডিউটিতে যাব এমন সময় কোন ছাত্রের ফোন, স্যার আমার তো এই সমস্যা। অনেক নামাজি মানুষকেও দেখি নামাজের সময় (তাও আবার মাগরিবের সময়) কাউকে ফোন দিচ্ছেন; আমার মূল প্রসঙ্গটা নামাজ নিয়ে নয়, নামাজ পড়া বা না পড়াটা যে কারো ব্যাক্তিগত বিষয়। কিন্তু টেলিফোন ম্যানার্স কোন ব্যাক্তিগত ইস্যু হতে পারে না, এটা সোশ্যাল ইস্যু। এই লেখার ফোকাসটা ফোনালাপে সামাজিক রীতি বিষয়ক।

ইদানিং একটা সহজ সমাধান বের করার চেষ্টা করছি, কাজের মুহূর্তে ফোন এলে কেটে দেই, কিংবা রিসিভ করি না। কিন্তু রেহাই পাই না, কেটে দেবার পরেও দেখি আবার রিং বাজছে। তারপরে খুবই জরুরী ভেবে রিসিভ করে দেখি তেমন জরুরী কিছুই না। সারাদিন ক্যাম্পাসে থাকার পরেও যখন কোন ছাত্র পড়াশুনা সংক্রান্ত বিষয়ে রাতে আমার একন্ত পারিবারিক অবসর সময়ে ফোন দেয়, তখন অবাক না হয়ে পারি না, বিধাতা যখন ঘিলু বিতরণ করছিলেন, তখন এরা কোথায় ছিল!

মাঝ রাতে ফোন এলে আমার পিলে চমকে যায়; এই সময় সচরাচর খারাপ সংবাদই আসে। কিন্তু ফোন ধরেই যখন শুনি “আপনে কে” কিংবা “এইডা কুন জায়গা ভাই”, তখন আমার কি করা উচিত? অবশ্য সিম কার্ডের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পরে মনে হয় এই ঝামেলাগুলো কিছুটা কমেছে। আমরা কি তাহলে ধরা পরার ভয় না পাওয়া পর্যন্ত ম্যানার্স শিখি না নাকি?

কিছুদিন আগে টেলিফোন ম্যানার্স নিয়ে একটা লেখায় পড়েছিলাম, দুচারবার রিং বাজার পরে কেউ রিসিভ না করলে তা কেটে দেয়াই ভাল। সব সময়ই যে মানুষ কেবল মাত্র অন্য ঘরে থাকার জন্য ফোন রিসিভ করেন না, এমনটা নয়; কখনো কখনো ব্যস্ততার কারনেও তো অনেকে ফোন রিসিভ নাও করতে পারেন। একান্ত জরুরী না হলে কিছুটা গ্যাপ দিয়ে আবার ফোন করা যেতে পারে। আবার ফোন বাজিয়েই যাচ্ছি, এখন ডেস্কে যদি রিসিভার ব্যাক্তিটি না থাকেন, তাহলে আসে পাশের মানুষগুলোর কেমন লাগছে একবার ভাবুন তো। কর্পোরেটে যখন ছিলাম, আমার পাশের কিউবিকল-এ একজন অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ফোর্স অফিসার বসতেন। একদিন তার সামনের কিউবিকল-এর ইণ্টারকম বেজেই চলেছে, একেবারে বিরামহীনভাবে। মাথা খারাপ হবার জোগাড়। তিনি সামনের কিউবিওকল-এ গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে অপর প্রান্তের পরিচয় জেনে নিলেন। তারপরে ঠাণ্ডা স্বরে এমনভাবে অপরপ্রান্তের কানের পোকাটা ঝেড়ে দিলেন যে মুখ টিপেও হাসি আটকাতে পারছিলাম না।

কি আর করা, কবিগুরু নিজেই যেখানে বলে গেছেন বাঙালি নাকি মানুষ হয়নি, তখন আমি কোন ছাড়!

৬,৬৭২ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।