বিবাহের শুরু- সিরিয়াল ১৭ ও ১৮

সিরিয়াল ১৭

ডিসেম্বর ২০,২০০২।..চারুকলা…বিবাহের শুরু

চারুকলার জনগণ মুখ চাওয়াচাওয়ি করে যে যার কাজে চলে গেল

আরিফঃ তুমি সবার সামনে আমাকে পায়ে ছুয়ে সালাম করলে?

আমিঃ কি করব! আপনি যে কাদলেন!

আরিফঃ সবাই ভাবল, তুমি আমার বউ

আমিঃ আর আপনি একটা পাগল!

আরিফঃ এখন তো আর টাকা নিয়ে রিকশায় ঊঠতে আপত্তি নেই

আমিঃ কেন নেই?

আরিফঃ এখন আমার বউ। তাই

আমিঃ লাইসেন্স নাই, আবার বউ

আরিফঃ ঠিক আছে, সামনে ২২ ডিসেম্বর। মানে আর মাত্র ১ দিন। লাইসেন্সটা তাড়াতাড়ি না করালেতো ল্যাংড়া জুটবে পরে।

আমিঃ আমি ল্যাংড়া হব?

আরিফঃ এত হাটলে খালি ল্যাংড়া না, মারাও যেতে পারো। এখন থেকে দোকান থেকে মিসকল দিবা। আমি ব্যাক করব

আমিঃ ঠিক আছে। কিন্তু ভেবে দেখেন শশুড়বাড়ী পাবেন না। কোনদিনও না। আব্বু আম্মু কোনদিনও মানবে না।

আরিফঃ লাগবে না শশুরবাড়ী।

আমিঃ কিছুই পাবেন না। খালি হাত পায়ে আসব

আরিফঃ চলবে

অনেকেই বিশ্বাস করবে না, একটা ছেলে শুধুমাত্র একটা মেয়ের পায়ে, দিনের পর দিন কষ্ট করে, বহু পথ হাটার চিহ্ন দেখেই, নিজেদের বিয়ে ৫ বছর এগিয়ে নিতে পারে। বিশেষত ছেলে যখন কেবল মেসে থাকে। ব্যবসা করে টুকটাক। এখানে বলে নেয়া ভালো, আরিফের বাবা নেই। ক্যান্সারে মারা গেছেন ১৯৯৫ সালে। একা একা সংসার চালায় যতটা পারে। ছোট ভাই পড়ে। বোন বিয়ে হয়েছে।

সিরিয়াল ১৮

২১ ডিসেম্বর, ২০০২…বিয়ে…মানে কি!

মে, ২০০২ আমার বয়স ১৮ হয়েছে। কিন্তু তাই বলে বিয়ে কি জিনিস এটা বোঝার মত বুদ্ধি হয়নি। আমি কিন্তু আরিফের বাবার নাম পর্যন্ত জানি না। আর তিনি আবার জীবনী জানেন। কেমন দরের গাধা আমি। কেবল আরিফকেই চিনি। একবার দেখেছিলাম তার মাকে, বোন কে। সালাম করেছিলাম মাকে। কিন্তু তেমন কথা বলা হয়নি। বলতে গেলে কিছুই জানি না। ওইদিন আরিফের এক দুলাভাই আমাদেরকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন। যাকে একরকম বিয়ে বলা যায়।

এবার নিজেদের বিয়েতে কোন রকম ভয়ও নেই, চিন্তাও নেই।কারণ বিয়ে কি জিনিস তাই তো জানিনা, বুঝিও না। আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি কারণ, আমি অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কালচারে পড়তে যাব। তাই যাবার আগে আরিফ চায় আমাকে বন্ধনে আটকাতে। আর আরিফ চায় বিয়ে করতে কারণ, প্রতিদিন আমি রিকশাভাড়া নিতে মানা করি। আর লম্বা পথ হেটে হেটে আমার পায়ের হাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রিকশাভাড়ার টাকা দিয়ে আরিফকে ফোন করে কথা বলি।যাই হোক, ২২ ডিসেম্বর, ২০০২ আমাদের বিয়ে হবে।

২২ ডিসেম্বর

বাসায় কি বলে বের হব ভাবছি। ২৫ তারিখে লাস্ট মডেল টেস্ট। তাই আম্মুকে বললাম আমার বান্ধবীর হোস্টেলে গিয়ে দুইজন একসাথে পড়ব। হোস্টেল আমাদের বাসা থেকে পায়ে হাটা পথ। দুপুরে ভাত খেয়ে বেরিয়েছি। আরিফ তখন ফকিরাপুল থাকে তার ভাই, আরো দুজনভাই, আঙ্কেল সাথে নিয়ে । আমি চিনিনা। বিয়ে বাসায় হবে। পাশেই ওর চাচার বাসা। মামারা আসবেন। আমাকে নিয়ে আরিফ তার বাসায় গেল। সবাই হাজির। ঘর এতো সুন্দর করে গুছানো, আমি মুগ্ধ হলাম। একটা ছেলের ঘর এত সুন্দর হতে পারে! আরিফ সাহেব বরাবরই ভীষণ পরিপাটি মানুষ। লম্বা চুলের ছেলে, এমন তেমন স্টাইল, খোচা দাড়ি…এসব আমি ঘ্রিনা করি।

এক বন্ধু ফুল আনে, আরেকজন ছবি তুলে। কিন্তু বিয়ে হবে কি পড়ে?

বন্ধুঃ কিরে তোরা এভাবেই বিয়ে করবি?

আরিফঃ কেন সমস্যা কি?

বন্ধুঃ বিয়ে তো আর বার বার করবি না। যা, দুইজনে একটা শাড়ি কিনে নিয়ে আয়, আর পাঞ্জাবী।

আরিফঃ পাঞ্জাবী একটা আছে। নীল । ওইটা দিয়েই হবে। শাড়ি কিনে আনি

আমি আর আরিফ একটা দোকানে গিয়ে ৫ মিনিটেই একটা শাড়ি কিনে ফেললাম। আর এক গাছি চুড়ি। ব্যাস শেষ!

আরিফ তার প্রেসের কাজে বেরিয়ে গেল। সন্ধ্যার আগেই আসবে বলে। সবাই মিলে হাসি আর গল্প হচ্ছে। তারপর ফুল দিয়ে বাসর সাজালো। কিন্তু আমিতো একটু পরই চলে যাব।এতো কষ্ট করছে বন্ধুর দল। খারাপ লাগল নিজের কাছে। সবাই রেডী। বিয়ে হবে। কিন্তু বর কোথায়?

বড়ভাইঃ বর কি পালালো নাকি?

আমিঃ আমার চেহারা এত খারাপ ভাইয়া?

বড়ভাইঃ না, কি যে বল! তুমি আমার আরিফের রাজকন্যা। তোমার জন্য এত কিছু!

আমিঃ এত কিছু মানে?

বড়ভাইঃ বহুদিন আগে একদিন আমি আর আরিফ ঘুমাচ্ছি। দেখি আরিফ কথা বলে ঘুমে। একটু পর দেখি আমার হাত ধরে। তারপর দেখি হাতটা জড়ায়ে নিজের গালের নিচে নিয়ে ঘুমায়।

আমিঃ কি? হাহাহাহাহা

বড়ভাইঃ তখনি বুঝলাম আমার ভাই গ্যাছে

আমিঃ ঘুমে কি বলে?

বড়ভাইঃ একটা নাম ধরে ডাকে।

আমিঃ কি নাম ডাকে? আমার নাম নাকি অন্য?

বড়ভাইঃ বলা যাবে না।

আমিঃ কেন? নিশ্চয় অন্য নাম। বলেন অসুবিধা নাই।

বড়ভাইঃ লক্ষী বলে ডাকে

আমিঃ হায় হায়! তার মানে আমি ২ নং সিরিয়াল! নাকি আরো আছে ভাইয়া?

বড়ভাইঃ আর বল না, কার সাথে জানি ফোনে কথা বলেছিল। মেয়েতো বাসায় বাপ মা নিয়ে হাজির। বিয়ে করবে। পরে আরিফ হাফ প্যান্ট পড়া অবস্থাতেই দৌড় দিয়ে জীবন বাচাইছে।

আমিঃ হাহাহাহ, আপনার ভাইয়ের তো দেখি দারুণ ডিমান্ড

এক এক করে ৩ ঘন্টা পেরিয়ে গেল। জামাইয়ের খবর নেই। আমার খুব ভয় লাগল। মানুষটার কিছু হল নাতো! এক্সিডেন্ট হয়নি তো! মনে মনে দুয়া পড়ছি

১,৩৯৬ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “বিবাহের শুরু- সিরিয়াল ১৭ ও ১৮”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "কী বিশাল ঝুঁকি যে নিয়েছিলে এখন কি বুঝতে পারো?" - নূপুর
    বাংলায় এই ঝুঁকি কথাটা রিস্ক বা গ্যাম্বলিং?
    উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়।
    এইটা রিস্ক ছিল নাকি গ্যাম্বলিং?
    রিস্কের ইমপ্লিকেশন হলো, মুভটা ইনফর্মড ক্যাল্কুলেটেড। এখানে রিটার্ন কম বা বেশী হবার সম্ভবনা থাকে তবে সব হারানোর ব্যাপার থাকে না। মুভটা একবার কাজ না করলেও চিন্তার কিছু নাই, লেসন হয় এবং ঐ লেসন ব্যবহার করে একই ধরনের পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ রিটার্ন অনুকুলে আনার সম্ভবনা বাড়ানো যায়।
    ডিসিশন আন্ডার রিস্কে প্রতিটি ভেঞ্চার ক্লিক না করলেও লং রানে মানে অনেক গুলো একই ধরনের ডিসিশনের গড় রিটার্ন পজেটিভ হয়। রিস্কফ্রি গড় রিটার্ন থেকে ভাল বা বেশী হয়। রিটার্ন বেশী হোক কম হোক, লেসনের ভবিষ্যৎ ব্যবহার্য্যতার কারনে, ডিসিশন আন্ডার রিস্ক সবসময়েই একটা গ্রহনযোগ্য পন্থা হিসাবে রয়ে যাবে।
    গ্যাম্বলিং হল সেই মুভ যেটাতে ক্যাল্কুলেশনের সুযোগ নাই, তাই কি পেতে কি হারাচ্ছি তা জানা থাকে না। সাকসেস হতে পারে কিন্তু সেটাও হিসাব করা যায় না, আর সাকসেস না হলে সব হারাতে হয়। এমন ভাবেই হারাতে হয় যে আর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ থাকে না। পুরাই "ফেরার পথ নেই, থাকে না কোন কালে" - সিচুয়েশন।
    গ্যাম্বলিং-এর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো এ থেকে ডিসিশন সম্পর্কিত কোন লেসন তৈরী হয় না।
    গ্যাম্বলিং-এ হেরে গেলে লুজারকে জীবনের বিনিময়ে এমনভাবে প্রায়াশ্চিত্ত করতে হয় যে লেসনের সুযোগ থাকলেও সেটা নেয়ার উপায় থাকতো না। আর সাক্সেস যখন হয়, দেখা যায় সেটার পিছনে ডিসিশন না, অন্য আরও অনেক কিছু জড়িত। এমনভাবে জড়িত যার সাথে ডিসিশনের সম্পর্ক সেই ভাবে নাই।
    তাই সাক্সেসটা পরবর্তিতে অন্যের জন্য কোন প্রিসিডেন্স বা রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। কোন লেসনও থাকে না।
    রিস্ক একটা স্বাভাবিক ডিসিশন অপশন যেটা অন্যান্য ডিসিশনের পাশাপাশি নেয়া হয় (পোর্টফোলিও করে) কারন এতে টোটাল রিটার্ন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশী হয়।
    গ্যাম্বলিং-টা করা হয় কেবলি রিক্রিয়েশনাল পারপাজে। এড্রেনালিন রাসের ব্যাপারটা উপভোগ করতে। তাই রিটার্ন হয়ে পড়ে গৌন।
    এইজন্য অনেক সময়েই রিক্রিয়েশনাল পারপাজ বা এড্রেনালিন রাস উপভোগের জন্য কেউ যখন নিজের জীবন-ক্যারিয়ার-ভবিষ্যত লাইন-অব-ফায়ারে এনে ফেলে, সেই গ্যাম্বলিংটাকে "বোকামি" হিসাবেও বর্ননা করা হয়ে থাকে। দোষ দেয়ার উপায় থাকে না।
    এগুলো নিয়ে গল্প জমে, মুভি হয়, আসর জমে। কিন্তু কাউকে এটা অনুকরন, অনুসরন করতে বলা যায় না। এমন কি নিজের সন্তানকেও নিজের একটা পদক্ষেপ থেকে লেসন নিতে বলা যায় না। এইটা একটা দুঃখজনক অধ্যায়ই হবারই কথা।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভাবছিলাম এই "ঝুকি"-র বিষয়টা নিয়ে আরও কিছু আলাপ হোক। তাহলে একটা গল্প শুনাবো।
    কেউ কিছু বলছে না দেখে নিজে থেকেই আলাপ শুরু করছি। কারন গল্পটা শুনাতে ইচ্ছা হচ্ছে।

    ঘটনাটা আর্লি সেভেন্টিজের। ১৮-১৯ বছরের এক তরুন আর ১৯-২০ বছরের এত তরুনির কালভচারাল ইনভল্বমেন্টের কারনে কাছে আসার সুযোগ পায়।
    প্রথমে পরিচয় দিয়ে শুরু যা অচিরেই ঘনিষ্টতা ও শেষে প্রেমে রূপ নেয়। ঘটনা এমন পর্যায়ে পৌছে যে তাদের সম্পর্কটা বিয়েতে গড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে।
    কিন্তু উভয়ের পরিবারের কিছু সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা কেউ ওদের পাশে দাড়াতে পারে না।
    কলেজ পড়ুয়া দুই টিন-এজার অকুল পাথারে পড়ে।
    কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না। সাবলেট থেকে, টিউশনি করে বহু কষ্টে নিজেদের পড়াশুনা চালায়, নিজেরা চলে। এরই মধ্যে বছর ঘুরতে তরুনীর কোল আলো করে এক ফুটফুটে কন্যার আগমন ঘটে।
    টিউশনি আরও বাড়াতে হয়। পরিস্থিতি সামলাতে নাভিশ্বাস ওঠে তরুন-তরুনীর।
    একসময় গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকুরিতে ঢোকে তরুন। অনেক সংগ্রামের পর স্ট্যাবিলিটি আসা শুরু করে সংসারে।
    আরেক কন্যা আসে সংসারে।
    মধ্য আশিতে আমি যখন এই পরিবারের সাথে পরিচিত হই, দেখি চাঁদের হাট মিলিয়ে বসেছেন তাঁরা।
    কিন্তু অচিরেই জানলাম, চাঁদের হাটে আবারো দুর্যোগের ঘনঘটা।
    বাবার সাথে কালচারালি ইনভল্বড এক অর্থে শিস্য এক তরুনের সাথে জড়িয়ে গেছে বড় মেয়েটি। তার ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই দুজনের মন দেয়া-নেয়া। এসএসসির পরপরেই মেয়েটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, প্রিয়জনে হাত ধরে চলে যাবার জন্য।
    ২২-২৩ বছরের একটি ছেলে, তেমন কিছুই করে না। পড়াশুনার পাট প্রায় চুকিয়ে ফেলেছে, মানে বন্ধ। ছোট খাট অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজায়, অতি সাধারন এবং অনেক ভাই বোনের সাথে ভাড়া করা বাড়িতে বাস। কি করে সায় দেয়া যায় এই রকম সম্পর্কে?
    ছেলের পরিবার মেয়েটার উপরেও চুড়ান্ত বিরক্ত। ঘরে নিজেদেরই জায়গার টানাটানি, বেকার পুত্রের বউকে জায়গা দেবে কোথায়। মেয়ের বাবা-মার কাছে নালিশ দেয় মেয়েকে সামলানোর জন্য।
    সব দেখে বুঝে মেয়ের লক্ষ অর্জনে বাধ সাধে বাবা-মা। মেয়েও অনড়, "তোমরা পেরেছো, আমিও পারবো। ভালোবাসার পরাজয় মেনে নেব না কিছুতেই।"
    বাধ্য হয়ে মা স্বীকার করে, "হ্যাঁ, পেরেছি, কারন তোমার বাবা ছিলেন অন্য রকম। সময়টা ছিল অন্য রকম। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমাদেরকে ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। এই কষ্টটা ভালোবাসার জন্যে হলেও তা করাটা আমাদের উচিৎ হয় নি। তোমাকে কষ্ট দেয়াটাও উচিৎ হয়নি। যা হয়েছে ঐগুলা ভুল ছিল। ঐ ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েছি বলেই জানি তা কতটা খারাপ, কতটা কষ্টের। জেনে বুঝে তোমাকে এই রকম কষ্টের ভিতরে ছেড়ে দেই কি করে?"


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।