শিরোপার রং ছড়াল যে মেয়েটি

Slider খেলা

দলের মধ্যে যে কোনো খেলোয়াড়কে যদি প্রশ্ন করা হয় সতীর্থ হিসেবে মাসুরা পারভিন কেমন? উত্তর নানা রকমই পাওয়া যায়। তবে বর্ণনা যেই দিক, সাতক্ষীরার এ মেয়ে সম্পর্কে শুরুতেই ওই ‘চঞ্চল’ উপাধিটা বাদ দিয়ে বলতে পারবেন না কেউ। মাসুরার চাঞ্চল্যই যেন আজ বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলের বিজ্ঞাপন। এক চ্যাম্পিয়ন দলের শরীরী ভাষা।

অনেক দূর থেকে দেখলেও দলের মধ্যে থেকে আলাদা করে চেনা যায় মাসুরাকে। কারণ ওই চাঞ্চল্য। অনুশীলনে হয় সতীর্থ কারও বুটের ফিতে খুলে দিচ্ছেন, না হলে জার্সি ধরে করছেন টানাটানি। তাঁকে আলাদা করে চিনে নেওয়ার কারণ আছে আরও-উজ্জ্বল ঝলমলে বর্ণিল চুল ও উচ্চতা। প্রায় পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতাটাকে কাজে লাগিয়েই তো ভুটান জয় করলেন বাংলাদেশ দলের এই সেন্টারব্যাক। নেপালের বিপক্ষে এক গোল করেই করে দিলেন শিরোপার মীমাংসা।

মাসুরার নামের পাশে গোল করার খ্যাতি নেই বললেই চলে। পাকিস্তানের জালে ১৭ গোল দিয়ে যেদিন টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল বাংলাদেশ, সেদিন গোল করেছিল মোট সাতজন খেলোয়াড়। সেই সাতজনের মধ্যেও নাম ওঠেনি মাসুরার। এর আগে ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৬ বাছাইপর্বে মোট ২৬ গোল করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচ প্রথম একাদশে খেলা সত্ত্বেও মাসুরার নামের পাশে ছিল না গোল। শেষ তিন ম্যাচে মোট ২৩ গোল করা বাংলাদেশ দলের হয়ে আজ মাসুরা গোল না পেলেও হয়তো কারও কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হতো না! কিন্তু ফুটবলের ভাগ্যবিধাতা আজ ফিরে তাকিয়েছেন মাসুরার দিকে।

এমন সময়ে গোল করলেন, যখন গোল হয়ে উঠেছিল সোনার হরিণ। এ গোলটি হয়ে থাকবে ইতিহাস। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল আজীবন সাক্ষী দেবে মাসুরা পারভিনের একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৮ মেয়েদের সাফের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আরও একটি ইতিহাসে নাম আছে মাসুরার। চলতি বছর প্রথমবারের মতো এএফসি ফুটসালে নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৭-১ গোলে হারা ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন মাসুরা। ফুটসালে করা এই গোলটিই ছিল এত দিন মাসুরার একমাত্র গোল।

মাসুরাকে সবাই জানে একজন দুর্দান্ত ডিফেন্ডার হিসেবেই। ডিফেন্ডারদের ‘মারমার কাট কাট’ হওয়া উচিত বলে যে একটা কথা আছে, তার সবকিছুই দেখা যায় মাসুরার মধ্যে। দু’পায়ে নিখুঁত ট্যাকল করতে পারেন, এরিয়াল বলে দুর্দান্ত হেড ওয়ার্ক আর সে সঙ্গে দুর্দান্ত কভারিং। দু’প্রান্ত থেকে ভয় ধরানো সব ক্রস যখন ভেসে আসে বক্সে তখন তাঁর অনুমানক্ষমতাও চোখে পড়ার মতো। এত সব গুণের সঙ্গে যোগ করে নিন লড়াকু মনোভাব ও প্রচণ্ড সাহস। একজন সেন্টারব্যাকে জন্য আর কিই-বা চায়!

এ দিয়েই আজ থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপাল ফরোয়ার্ডদের কাছ থেকে ঢেকে রাখলেন বাংলাদেশকে। আর বড় প্রয়োজনের সময়ে মনিকা চাকমার নেওয়া ফ্রি কিক থেকে হেডে করলেন দুর্দান্ত এক গোল। থিম্পুতে মাসুরার হেডটা যখন জালে জড়াল বাংলাদেশের আকাশেও ছড়িয়ে গেল একমুঠো আবির, উৎসবের আবির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *