কুডি ভাজা। নাম যারা আগের থেকে জানেন তাদের কিছু বলার নাই। কুডি মানে হচ্ছে ছোট আর ছোট করে মাছ ভাজাই (রান্নাও আছে) হচ্ছে কুডি ভাজা। তবে এই কুডি ভাজা হয় সাধারণত বড় শোল মাছ দিয়েই। বড় শোল মাছ ছোট করে টুকরা টুকরা করে কেটে প্রথমে ভাজি এবং পরে রান্না করাই হচ্ছে কূডি ভাজা। এই কুডি ভাজা আখাউড়া অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় এবং এই অঞ্চলে এমন কোন পরিবার নেই যে এই রান্না খাবার খান নাই।
আমার ব্যাটারী আমাকে প্রায় বলেন, আমার শাশুড়ি আম্মা (আমি উনাকে দেখি নাই, আমাদের বিবাহের আগেই তিনি পরবাসী হয়ে গেছেন) এই রান্না বেশ ভাল করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তিনি মানে ব্যাটারী এই রান্নাটা শিখে নিতে পারেন নাই। পরে চাচী/মামী থেকে এই রান্নার কথা জেনেছেন এবং অনুমানে রান্না করেন।
চলুন রান্না দেখি। দুই পর্বের রান্না। প্রথম পর্বে মাছে সামান্য হলুদ মাখিয়ে ভেজে ফেলতে হয়। দ্বিতীয় পর্বে রান্না। বিশেষ দিক হল, পেঁয়াজ কুঁচি নয় বড় বড় করে কাটতে হয়, যাতে রান্না শেষেও পেঁয়াজ দেখা যায়।
উপকরনঃ
– শোল মাছঃ ৩০০ গ্রাম (হিসাব অনুমানিক)
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপের চেয়ে কম (পেঁয়াজ কাটতে হবে কিউব বা বড় করে)
– হলুদ গুড়াঃ এক চা চামচ
– রসুন বাটা বা পেষ্টঃ ২ চা চামচ
– মরিচ গুড়াঃ এক চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– কাঁচা মরিচঃ ৫/৬ টা (ঝাল বুঝে)
– ধনিয়া পাতাঃ পরিমান মত
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ পরিমান মত (মাছ ভাজতে এবং রান্নায়)
– পানিঃ হাফ কাপ
প্রনালীঃ
এ মাসে অনেক শোল মাছ খেলাম। উপরওয়ালার কাছে শোকরিয়া জানাই। মাছ ও বুলেট! ছবি একদিন কথা বলবেই!
এভাবে মাছ গুলো কেটে ধুয়ে সামান্য হলুদ গুড়া ও লবন মাখিয়ে নিন।
গায়ে গায়ে তেলে মাছ গুলো ভেজে নিন (না বেশি না কম, এই ভাজার উপরই স্বাদ নির্ভর করে)। মাছ ভাংতে পারবে না, লেগে গেলে আগুন বন্ধ করে মাছ উঠিয়ে নিন।
এবার কড়াইতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ গুলো ভাজতে থাকুন। সামান্য লবন ও রসুন যোগে পেঁয়াজে হলদে ভাব নিয়ে আসুন।
এবার হলুদ ও মরিচ গুড়া পানিতে মিশিয়ে পেঁয়াজে ঢেলে দিন। এবং ভাল করে কষাতে থাকুন।
ঠিক এমন চোহারায় এসে যাবে। লক্ষ্য করে দেখুন, পেঁয়াজের অবস্থা, একটাও গলে নাই।
এবার ভেজে তুলে রাখা মাছ গুলো দিয়ে দিন।
ভাল করে মিশিয়ে নিন এবং কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিন।
হাফ কাপ পানি দিয়ে দিন এবং মিশিয়ে নিন।
ব্যস, ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১৫ রাখুন এবং পরে ঢাকনা তুলে দিন। ঝোল শুকিয়ে গায়ে গায়ে হয়ে যাবে।
ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ‘ওকে’ বলুন। এবার ধনিয়া পাতার কুঁচি ছিটিয়ে দিন।
পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
আহ, কি মজা আখাউড়ার কুডি ভাজা।
(আমার মন্তব্যঃ তাজা মাছ ভেজে আবার রান্না করলে মাছের স্বাদ ও ঘ্রাণ শেষ হয়ে যায় বলে আমি মনে করি। এই কুডি ভাজা খেতে বসেও আমি শোল নাকি অন্য কি মাছ খাচ্ছি, তা বুঝতে পারছিলাম না। তবে স্বাদের কমতি ছিল না। ভাজা মাছের গায়ে গায়ে পেঁয়াজ লেগে থাকা এবং গরম ভাতে মেখে খেতে বেশ ভালই লাগছিলো।)
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
সিলেটে এটাকে বলে কুটি ভাজা। মানে শোলমাছের টুকরো গুলোকে আরো ছোট ছোট করে মাঝের কাটা ফেলে কড়া করে ভেজে ভুনা। মাঝের কাটা ফেলে দিলে খেতে বসে আর কাটার ভয় থাকেনা। টপাটপ খেয়ে ফেলা যায়। 😀
LikeLike
ধন্যবাদ রান্নাতো বোন,
উচ্চারনে আমিই কোন ভুল করছি কি না বুঝতে পারছি না! কাটা ফেলে ভেজে ভুনা! আহ, পেলেই টপাটপ!
কত কি খাবার আছে এই দুই দিনের দুনিয়ায়! আমরা কয়টার স্বাদ নিতে পারছি।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
না, না, আপনার উচ্চারন ঠিক আছে। স্থানীয় ভাবে অনেক অঞ্চলেই ছোট জিনিসকে কুটি, কুডি বলে।
LikeLike
হা হা হা… এক দেশের বুলি আর একদেশের গালি! কথাটা মনে পড়ে গেল। যতদুর মনে করছি, ফেনী অঞ্চলে কুডি মানে কাটা! হা হা হা… মুরুব্বী পেলে জিজ্ঞেস করতে হবে।
আপা, চ্যানেল নাইন এ রান্নার একটা অনুষ্ঠান হয়। এই ধরনের রান্না দেখায়, গ্রামের এবং পাহাড়ীয়াদের রান্না। দুই একবার আমার চোখে পড়ছে। দেখেছেন কখনো?
কুটি, কুডি যাই হোক, আমাদের রান্না বেঁচে থাকুক বিশ্বময়। সময়ে পেলে রান্না পোষ্ট করে যান, একদিন সবাই দেখবেই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
It is new something.
LikeLike
ধন্যবাদ জাভেদ ভাই। আমাদের অনেক খাবার হারিয়ে যাচ্ছে, অথচ কত মজার সেই খাব্র গুলো।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
এই খাবারটা খুব মজার, আমাদের বাসায় শোল বা গজারমাছ দিয়ে করা হত, আর সুরঞ্জনা আপা যেরকম বললেন–মাছের পিস আরো ছোট ছোট করা হত, আর দোপেঁয়াজা স্টাইলে ভুনা, আহ।
উদরাজী ভাই আপনি তো আমাদের ছোটবেলার সব রান্না ধরে টান দিচ্ছেন এক এক করে! চালিয়ে যান, আমর নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনার জন্য 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ রনি ভাই।
আসলেই আপনার কমেন্ট দেখে আমার একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে, আমাদের অনেক রান্না হারিয়ে যাচ্ছে। আমি যখন আমার পরিবার নিয়ে ভাবি, তখন দেখি কত খাবারই এখন আর আমাদের পরিবারে রান্না হয় না। আমরা সহজ এবং সর্টকাট হয়ে গেছি। চিকেনের উপর ১০০ ভাগ বসে থাকি!
গ্রামে গেলে আমি এমন আরো কিছু খাবার খুঁজে বেড়াবো।
শুভেচ্ছা থাকল।
LikeLike
আমাদের এখানে এটাকে ” খাকড়ি ” বলে । তবে আমরা শোল মাছের চামড়া ফেলে দিয়ে তারপর টুকরা করে কেটে রান্না করি ।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD